বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
নিজাম উদ্দিন আহমেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি॥
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে আওযামীলীগ প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত সভাসমাবেশ ও গণসংযোগে ব্যস্থ রয়েছে। প্রক্ষান্তরে মামলা হামলার ভয়ে বিএনপি বিভিন্ন কৌশলে প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ করছে। দু’দলই নির্বাচনি মাঠ গোছাতে নিজ নিজ দলীয় নেতাকর্মীদেও সংগে নিয়ে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে এই আসনটি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারনায় সরগরম হয়ে উঠছে। শেষ মুহুতে কে হচ্ছে নৌকার মাঝি ও ধানের শীষের প্রার্থী তা নিয়ে জনগনের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন ও হিসাব নিকাশ।
সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন। এ আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯০১জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮২জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪১৯জন। স্বাধীনতার পর এই আসনে আওয়ামীলীগ ৪ বার, বিএনপি ৪ বার ও জাতীয় পার্টি ২ বার দলীয় প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনটি আওয়ামীলীগ ধরে রাখতে চান। অন্য দিকে ফিরে পেতে বিএনপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা জোট করে হলেও আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। শেষ মুহুর্তে এসে প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং তদবির করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ দিনে গণসংযোগ ও রাতে ঢাকায় শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ৩২জন, বিএনপির ৪জন, জাতীয় পার্টিও ১জন, ইসলামি ঐক্য জোটের ১জন ও জাতীয় ইসলামী মহাজোটের ১জনসহ প্রায় ৪০জন মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। গণসংযোগ, কর্মীসভাবেশ, মত বিনিময় সভা, উঠান বৈঠক করে চলছেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুণ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু করছে। যতই দিন যাচ্ছে, ততোই নির্বাচনি হাওয়া জোরেসোরে বইতে শুরু করছে। সারা রূপগঞ্জ জুড়ে হোটেল রেস্তরায় ও চায়ের স্টলে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। তবে এই আসনে মুল প্রতিদন্ধীতা হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। যদিও আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরিন কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি সুবিধা নিতে চায়।
বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) তৃতীয়বারের মত মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সময় দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। তিনি সরকারের উন্নয়নের কর্মকান্ড তুলে ধরছেন। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার শীতালক্ষা সেতু, ভুলতা ফ্লাইওভার, মুড়াপাড়া কলেজ ও মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরনসহ রূপগঞ্জে সরকারের উন্নয়ন কাজকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগ গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণ করছে। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) তার মনোনয়নের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। পক্ষান্তরে বিএনপির আামলে শীতলক্ষ্যা নদীর কাঞ্চন সেতু নির্মাণ, গ্যাস লাইন স্থাপনসহ সড়ক, কালভার্টসহ সার্বিক উন্নয়নকে পুঁজি করে বিএনপি প্রার্থীরা গণসংযোগ করে বর্তমান সরকারের যত ব্যর্থতা তুলে ধরা হচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকরা অব্যাহত রাখতে আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ আর অপরদিকে পূনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠছে বিএনপি।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন প্রতাশীদের মধ্যে রয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার আওযামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার চেয়ারম্যান আল-হাজ্ব মোঃ শাহ জাহান ভুইয়া, তরুণ শিল্পপতি, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আল-হাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ভুইয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা, সহ-সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু, ইঞ্জিনিয়ার শেখ সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক ভুইয়া, জেলা যুব ক্রীড়া সম্পাদক মানজারি আলম টুটুল, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আজিজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান ভুইয়া সজীব, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজ, মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন রূপগঞ্জ থানা কমান্ডার আব্দুল জব্বার খান পিনু, আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার খান মোহাম্মাদ শামীম আজিজ, মোশাররফ হাসান বাবু, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভানেত্রী ডা, খালেদা খানম, দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুইয়া রানু, ভুলতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন ভুইয়া, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা, উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা মতিউর রহমান আকন্দ, যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য কামরুল হাসান তুহিন, জেলা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শীলা রানী পাল, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান শাহিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম চৌধুরী অপু। উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মেহের, সাধারণ সম্পাদক নাঈম ভুইয়া, মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি শাহরিয়ার পান্না সোহেল, আওয়ামীলীগ নেত্রী মাহনুর সুলতানা মুনমুন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদ আলী ও যুবলীগ নেতা শাহিন মালুম।
এদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়ন ক্রয় করেন জেলার বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও গাউছিয়া কর্পোরেশন-এর চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান দিপু বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও রূপগঞ্জ বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন। জাতীয় পার্টির পক্ষে মনোনয়ন ক্রয় করে সাইফুল ইসলাম। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী আল-হাজ্ব সৈয়দ আহমেদ ও কেএম আবু হানিফ হৃদয় তিনিও পোস্টার ব্যানার দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। রূপগঞ্জে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে ময়দানে নিজ নিজ দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।